টাইটানিক ( TITANIC ) ডুবে যায়নি ! তবে কি ঘটেছিল টাইটানিকের ভাগ্যে ? জেনে নিন ।


১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরনের টাইটানিক মুভি দেখার আগে খুব কম মানুষই টাইটানিক সম্পর্কে জানতো এবং এই মুভি দেখার পরে এই টাইটানিক বেশিরভাগ মানুষের মনে জায়গা করে নেয় এই মুভির দৃশ্যগুলো লাখ লাখ মানুষকে কাঁদিয়েছে কিন্তু আজকের বিষয় হচ্ছে টাইটানিক কি আসলেই ডুবেছিল নাকি এটা একটা ধোঁকা ছিল ? কি হল ! নড়েচড়ে বসলেন মনে হয় ? চলুন জানতে চেষ্টা করি সবকিছু পুরো ১০০ বছরের বেশি সময় আগে ‘’থমাস এন্ডরু’’ নামের একজন ডিজাইনার টাইটানিকের নকশা তৈরি করেছিলেন এবং বলে ছিলেন যে, টাইটানিক কোনদিন ডুবে যাবে না
এবার আপনি হয়তো ভাবছেন কি এমন কারণ ছিল যে কারণে তিনি বলেছিলেন এটা ডুবে যাবে না ? চলুন এর নকশা সম্পর্কে জানা যাক

টাইটানিক ও অলিম্পিক 

টাইটানিকে
ছিল অনেকগুলো কম্পারটমেন্ট এবং সেগুলো একটা থেকে আলাদা এবং মাঝের যাতায়াতের দরজাগুলো সম্পূর্ণ পানিরোধক ছিল যা তৎকালীন কেবল টাইটানিকেই ছিল এবং এই ব্যবস্থাগুলো এখনকার সকল জাহাজে এবং সাবমেরিনে ব্যবহার করা হয়

এবার জানা যাক এই কমারটমেন্ট থাকার সুবিধা কি ? ক্লাস এইটের বিজ্ঞান বইতে পড়েছেন যে, বিশাল লোহার জাহাজ পানিতে ভেসে থাকে অথচ এক টুকরো লোহা ডুবে যায় পানিতে কোন বস্তু ভেসে থাকার মূল বিষয় হল, ‘ বস্তু দ্বারা অপসারিত পানির ওজন যদি বস্তু হতে বেশি হয় তাহলে যে কোন বস্তু পানিতে ভেসে থাকবে ।‘ আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে থাকলে খুব সহজেই এই তত্ত্ব বুঝে নিতে পারবেন । এবার বলি কম্পারটমেন্টের কথায়, যেমনঃ একটা জাহাজের ভেতর মোট বিশটা কম্পারটমেন্ট রয়েছে এবং এখন কোন এক দুর্ঘটনায় জাহাজের বাইরের কোন অংশে ছিদ্র হয়ে গেলো । আর সেখান থেকে পানি প্রবেশ করলো । এমতাবস্থায় যে কমারটমেন্টে পানি প্রবেশ করেছে সেটা বন্ধ করে দিলে তখন পানি কেবলমাত্র সেই কম্পারটমেন্টকে পূর্ণ করবে কিন্তু বাকি অংশে প্রবেশ করতে পারবে না । এতে করে জাহাজে বড় ছিদ্র থাকার পরেও সেই জাহাজ অনায়াসে পানিতে ভেসে থাকবে । কেননা, ওই যে, তত্ত্ব বলেছে, জাহাজ দ্বারা অপসারিত পানির ওজন জাহাজের তুলনায় বেশি থাকবে সেই কারণে ।

দুটো জাহাজের কিছু পার্থক্য


টাইটানিক যখন ডুবে যায় তখন এটা ১৯১২ সালের ১৫ই এপ্রিল ছিল এবং গুনে গুনে ১৫০০জনের কিছু বেশি মানুষ একসাথে প্রাণ হারান । এরকম জাহাজ দুর্ঘটনা বিরল । ১৯৯৯ সালে রবিন গার্ডনার তার লিখিত বই titanic: the ship that never sank? বইতে দাবি করেন যে, টাইটানিক ডুবে যায়নি এবং এর মিল পাওয়া গিয়েছিল টাইটানিকের বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কথায় তারা বলেন যে, ডুবে যাওয়া টাইটানিকের সাথে লোগোতে একটু ভিন্নতা ছিল এবং এর রঙ ছিল কিছুটা কাঁচা

এই লেখকের মতে ১৫ই এপ্রিল ১৯১২ তারিখে আসলে অলিম্পিক নামে আরেকটা জাহাজ ডুবে যায় আমি জানি আপনি এখন এই পোস্টের লেখককে হয়ত মনে মনে গালি দিচ্ছেন এবং আপনি বিলিভ করতে পারছেন না কিছুই তাহলে চলুন আরও কিছু জেনে নেয়া যাক

টাইটানিক এবং অলিম্পিক ছিল একই জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নির্মিত এবং এদের চেহারাও ছিল একই রকম এবং এদের সার্ভিসে ছিল সেই একই কোম্পানি এই দুইটা জাহাজের পার্থক্য কেবল নামেই ছিল কিন্তু কোন অনভিজ্ঞ লোকের পক্ষে এদের অন্যান্য পার্থক্য বুঝতে পারা অসম্ভব এছাড়া আপনি গুগল মামাকে জিজ্ঞাসা করলেও যেসব ছবি পাবেন সেগুলো দেখলেও তাজ্জব হয়ে যাবেন এবং বুঝতে পারবেন এরা জমজ ছিল

আগে টাইটানিকের লোগো এবং পরে পাল্টে ফেলা টাইটানিকের লোগোর ভেতর পার্থক্য

একটু আগেই বলেছি, কম্পারটমেন্ট ব্যবস্থা কেবল টাইটানিকেই ছিল এবং অলিম্পিক নির্মাণের পরে টাইটানিক বানানো হয়েছিল তাই স্বাভাবিকভাবেই অলিম্পিকে কম্পারটমেন্ট ব্যবস্থা ছিল না
White Star Line নামে একটা কোম্পানির অধীনে ছিল টাইটানিক ও অলিম্পিক এর মালিক ছিলেন ইতিহাসের ধূর্ত ব্যবসায়ী  জে.পি. মরগান একদিন তার অলিম্পিকের সাথে হক নামে একটা জাহাজের দুর্ঘটনা ঘটে অলিম্পিকের ইনস্যুরেন্স করানো ছিল কিন্তু ইনস্যুরেন্স কোম্পানি জানিয়ে দেয় তারা কোন টাকা দিবে না এতে পরে বেশ ভালো আর্থিক সংকটে পড়েন মরগান এবং অলিম্পিককে চলাচলে উপযোগী করতে অনেক টাকা খরচ করেন একদিনে সংস্কার চলতে থাকে এবং অন্যদিকে নতুন জাহাজের উদ্ভোদন ঘনিয়ে আসে এই নতুন জাহাজ ছিল টাইটানিক এই সময়ে তিনি রটিয়ে দেন, তার কাছে অনেক সোনা রয়েছে এবং এই সোনা নিয়ে তিনি নিউইয়র্ক চলে যাবেন নতুন একটা বিজনেস দ্বার করাতে এবং জাহাজ ব্যবসায় তিনি লাভ করতে পারছেন না এবং এই সময় তিনি একই কোম্পানি থেকেই ইন্সুরেন্স করিয়ে নেন সোনার জন্য যদি সোনা চুরি কিংবা দুর্ঘটনায় নষ্ট হয় তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি তাকে ৮ মিলিয়ন ডলার দিবে কেবল হিসাব করুন আরও একশত বছর আগে এই টাকার কত দাম ছিল ?

রবিন গার্ডনারের বইতে দেখা যায়, জেপি মরগান ভয়ংকর পরিকল্পনা করেন তিনি চেয়েছিলেন টাইটানিকের পরিবর্তে অলিম্পিক যাবে এবং লোগো পরিবর্তন করে দিলে এক্সপার্ট ছাড়া কারো পক্ষে টাইটানিক এবং অলিম্পিককে আলাদা করে চেনা মুশকিল আর যেহেতু এখন সংস্কারের জন্য অলিম্পিক কারখানায় ছিল তাই একে টাইটানিক বলে চালিয়ে দিতে সমস্যা হবে না আর যাত্রাকালীন যদি দুর্ঘটনা ঘটানো যায় তাহলে দুইটা ইন্সুরেন্সের টাকাই পেয়ে যাবেন তিনি তবে তিনি আসলেই সোনা পাঠিয়েছিলেন কি না সেটা কেউ সঠিক বলতে পারেন না এবং এটা নিয়ে এখনো আমেরিকাতে বিতর্ক চলে এবং জাহাজে পর্যাপ্ত লাইফ বোটের নাটক করেন কিন্তু সময়মত দেরি হওয়ায় সেটাও পর্যাপ্ত ছিল না


দুটো জাহাজের সম্মুখ দিক একই রকম ছিল


একটা বরফে ধাক্কা লেগে এত বড় জাহাজ ডুবে যাবে সেটা প্রাণে বেঁচে ফেরা যাত্রীরাও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তারা জানতেন কম্পারটমেন্ট বন্ধ করে দিলে পানি প্রবেশ করবে না কিন্তু দেখা গেলো, দরজার নিচ দিয়ে এবং অন্যান্য রুমের ভেতরও পানি প্রবেশ করছে রবিন গার্ডনার এই বই লিখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ইনফো নিয়েছিলেন এবং সেসব রেকর্ডে দেখা গিয়েছিল ওইসব বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলেছিলেন, ‘ কেবল বরফে ধাক্কা লেগে এত বিশাল জাহাজ ডুবে যাওয়া অসম্ভব বরফের সাথে যখন ধাক্কা লাগে তখন হালকা শব্দ হয়েছিল যদি বরফ অনেক বড় হতো তাহলে জোরে শব্দ হবার কথা এবং কম্পনও সমান হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কিছুই তারা টের পাননি
টাইটানিকের ওজন ছিল ৪৬,৩২৮ টন এটা বরফের সাথে ধাক্কা লাগলে তো কম্পারটমেন্ট বন্ধ করে দিলেই পানির মুভমেন্ট বন্ধ করে দেয়া যেতো কিন্তু ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছিল যে, এরকম ঘটনার পরে তারাহুরোর সময় এটা নাকি তাদের মনেই ছিল না আচ্ছা আসলেই কি ডুবে যাওয়া জাহাজে কম্পারটমেন্ট ছিল ? এবং অলিম্পিক কিন্তু টাইটানিকের আগে নির্মাণ করা এবং এতে কম্পারটমেন্ট ছিল না

অলিম্পিক যখন রেজিঃ করানো হয়েছিল এর ওজন ছিল ৪৫,৩২৪ টন কিন্তু ১৯১৩ সালে যখন রেজিঃ নবায়নের জন্য এটা পুনরায় ওজন করা হয় তখন দেখা যায় এর ওজন বেড়ে হয়েছে ৪৬,৩২৮ টন তাহলে ভালো মত দেখলে এটাই আমরা বুঝতে পারি যে, এটা কোনভাবেই টাইটানিক ছিল না বরং এটা অলিম্পিক ছিল এছাড়াও টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরে এখনো পর্যন্ত এর ভেতর শতাধিক অভিযান চালানো হয়েছে একটা ডুবে যাওয়া জাহাজে এত অভিযান কেন ? এবং কেন মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা অপচয় করা হচ্ছে ? কারণ হল জে.পি. মরগানের সোনা খুঁজার চেষ্টা কিন্তু পানির নিচে টাইটানিক খুঁজে পাওয়ার পর থেকে রোবট পাঠিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও জাহাজের কোথাও একটা সোনার টুকরা পাওয়া যায়নি এবং এই সোনার বর্তমান বাজার দরও একটু চিন্তা করে দেখুন তাই এখনো এটা রহস্য যে, আসলেই সোনা ছিল কি না !  

টাইটানিক পানির নিচে খুঁজে পান ‘’বালারড’’ এরপর সাবমেরিনে চড়ে বহু মানুষ পানির নিচের টাইটানিক এখনো দেখতে যান এবং প্রায় ছয় হাজার জিনিসপত্র তাদের কাছে পাওয়া গেছে অর্থাৎ তারা টাইটানিক দেখতে গিয়ে বিভিন্ন আইটেম নিয়েও আসতো এরপরেই ইউনেস্কো টাইটানিককে আণ্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করে

দুটো জাহাজের ভেতর কিছু পার্থক্য


১৪ই এপ্রিল যেমন পহেলা বৈশাখ, তেমনি পরের দিনই ১৫ই এপ্রিল এই দিনই ১৫শ যাত্রীর সলিল সমাধি হয়ে যায় কতটা কাকতালীয় তাই না ? ১৫ই এপ্রিল মারা যায় ১৫শত যাত্রী ! এছাড়াও, অলিম্পিক (টাইটানিক) ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত সার্ভিসে ছিল এবং এটা এরপর অবসরে চলে যায় অথচ যার প্রথম ভ্রমণেই নিউইয়র্ক যাওয়ার কথা ছিল ২২শত এর বেশি যাত্রী নিয়ে কিন্তু কারো কারো লোভের কাছে পরাজিত হয়ে রাজা শেষ পর্যন্ত মুকুটহীন রাজা হয়েই মানুষের মনের অজান্তে থেকেই এর যাত্রা শেষ করে দেয়  একজন স্রষ্টা কি তার সৃষ্টি সম্পর্কে জানে না ? একজন নির্মাতা কি জানেন না তিনি তার সৃষ্টিকে এমনভাবে নকশা করেছেন যেন সাগর এঁকে গ্রাস করতে না পারে ! কিন্তু এসব এখন কেবলই রূপকথা টাইটানিক এখন একটা অভিশাপের নাম যাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য বানোয়াট গল্প রচিত হয়েছে কখনো বলা হয়েছে এর ভেতর একটা নারি মূর্তি বহন করা ছিল যাতে ভর করেছিল প্রেতাত্মা ! যে নাকি জাহাজকে ডুবিয়ে দেয় এছাড়া বলা হয় যে, সৃষ্টিকর্তাও নাকি এঁকে ডোবাতে পারবে না বলে এরকম কিছু মিথ ছড়িয়ে দেয়া হয় অথচ আসল ঘটনা কেউ বলে না তবে এটা সত্য যে, সত্য কোনদিন লুকিয়ে থাকে না এটা প্রকাশ পাবেই একদিন আগে কিংবা একশত বছর পরে আমরা ঠিক আশি বছর পরেই এর আসল ঘটনা জানতে পেরেছি কিন্তু একটা চলচ্চিত্র আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, আমরা ভুলে যাই কোনটা সত্য এবং কোনটা মিথ্যা !
আপনার কি মনে হচ্ছে এখন ? অলিম্পিক নাকি টাইটানিক, কে ডুবে গিয়েছিল ? কমেন্ট করে আপনার মতামত জানিয়ে দিন


1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.