শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি ইনকাম করার মাধ্যম কি কি ?

 

Image: Google


একজন শিক্ষার্থী যদি পড়ালেখার পাশাপাশি আয় করতে চায় তাহলে অনেক রকম আয়ের সুযোগ রয়েছে তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে স্কিল ছাড়া ইনকাম সোজা বাংলায়, আমরা জাতি হিসাবে অলস এবং কর্মবিমুখ এবং সহজেই আয় করার চিন্তা করে থাকি

তুমি যদি শুধুমাত্র কথা বলা জানো, আরেকটু সহজ করে বলি, বোবার মত চুপ করে থাকো না, স্বাভাবিকভাবেই মুখ থেকে বৃষ্টির মত কথা ঝরে পড়ে তাহলে তোমার জন্য দারুন একটা কাজ আছে

Image: Google


আমাদের দেশে সারা বছরই কোন না কোন মেলা হয়ে থাকে যেমন, বাণিজ্য মেলা, ঈদ মেলা, বই মেলা, তাঁত মেলা, আয়কর মেলা, আসবাব মেলা, এই সেই আরও কত কি!! তোমার প্রথম কাজ যেকোনো একটা মেলাকে টার্গেট করে গুণে গুণে ৩-৪ দিন চলে যাবে এবং তাদের সেলসম্যান লাগবে কিনা এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে তোমার নাম্বার দিয়ে আসো যদিও আগেই নিয়োগ হয়ে যায় কিছু কিছু স্টলে কিন্তু মেলা শুরু হওয়ার পরেই অনেকে নানা কারণে আসতে পারে না এবং এমন দৃশ্য বেশিরভাগ স্টলে হয়ে থাকে এভাবে ৩-৪ দিন যেতে থাকো কোথাও না কোথাও তোমার একটা কাজ জুটে যাবে তারপর মন দিয়ে পুরো মেলাজুড়ে কাজ করো তারাই তোমাকে পরের কাজের জন্য হায়ার করবে এবং সেখানে অনেকের সাথে পরিচয় হয়ে যাবে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে অনেকেই কাজ করে তারাই তোমাকে অফার করবে কাজের জন্য সারা বছর কাজের চাপে তখন তুমিই একটু বিরতি খুঁজবে ছাত্রাবস্থায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টগুলোর সাথে অনেক কাজ করেছি সেজন্য মেয়েদের সাথে ভালো যোগাযোগ রাখবে যারা ইভেন্টে কাজ করে তারা অনেক কাজের অফার তোমাকে দিতে পারবে

Image: Google


এছাড়াও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে যোগাযোগ করো এক্সামের সময় তারা পিয়ন দিয়ে গার্ড দেয়ায় আর কোন লোক খুঁজে না পেয়ে তুমি তাদেরকে বলে রাখো এমন কাজের জন্য তারা যেন তোমাকে নক দেয় -৩ ঘণ্টা গরু তাড়ানোর মত একটু ধমকি ধামকি দিয়ে যদি ৩০০-৪০০ টাকা পকেটে আসে ক্ষতি কি? মাঝ থেকে অনেকে ভাবতে পারে তুমি একজন শিক্ষক অনেকে প্রাইভেট পড়ার অফার দিতে পারে

 

Image: Google

যদি তোমার লিসেনিং স্কিল ভালো হয় এবং সরি কি বললেন, এমন কথা বলার অভ্যাস না থাকে তাহলে বিভিন্ন বাংলা এবং ইংলিশ কল সেন্টার রয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশে এসব কল সেন্টারে স্মার্ট স্যালারিতে জব হয় যদি তুমি ইংরেজি পড়তে পারো এবং অর্থ বুঝো আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বেশিরভাগ কল সেন্টারে একটা ফাইল পড়তে দেয় এবং জিজ্ঞাসা করে এই বাক্যের বাংলা অর্থ কি? যদি উত্তর দিতে পারো তাহলেই জব নিশ্চিত এরপর তোমার যোগ্যতা দেখানোর পালা পত্রিকার চাকরির নিউজ, ফেসবুকে বিভিন্ন জবস গ্রুপ ও পেজে খোঁজ রাখো, এমন অনেক পোস্ট তুমি দেখতে পাবে বেশিরভাগ মানুষ না জানার কারণে এটা ওটা বলে ভয় দেখায়

Image: Google


 তুমি যদি লিখতে পারো তাহলে তোমার সাম্প্রতিক সময়ে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা, কিভাবে সেখানে যেতে হয়, কম খরচে কিভাবে ঘুরতে হয়, ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত পোস্ট লিখে ফেলো ছবি সহকারে এবং প্রিন্ট করে কয়েকটা পত্রিকার অফিসে গিয়ে দিয়ে আসো এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রাখো প্রথমেই কাজ দিবে না, কিন্তু কয়েকটা লেখা জমা দেয়ার পরেই তারা তোমাকে একজন কর্মঠ হিসাবে বেছে নিবে এবং তোমার লেখা ভালো হলে সম্মানি হিসাবে ৫০০-১৫০০ টাকা পেয়ে যাবে তারপর সম্পাদকেরাই তোমাকে ফোন করবে, শুক্রবারের ফিচারে তোমার লেখা লাগবে, ঈদে তোমার লেখা চাই, সাপ্তাহিক অমুক পত্রিকার আরেক সম্পাদক তাকে ধরেছে তোমার লেখার জন্য শুধু প্রথম লেখা পাবলিশের অপেক্ষা

তুমি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসাবে লিখতে পারো তোমার আশেপাশে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ছবিসহ লিখে পত্রিকায় জমা দাও, লেখার গুরুত্ব থাকলে ছাপা হবে এবং পেমেন্ট দিবে অনলাইন অনেক পোর্টাল রয়েছে নিউজের জন্য হাহাকার করে তাদেরকে মেইল করো তারা সাড়া দিবে

বাংলাবাজারের নাম নিশ্চয় শুনেছো? চলে যাও সেখানে প্রায় সব প্রকাশনীর অফিস সেখানে রয়েছে তাদের সাথে কথা বলো তুমি প্রুফরাইটার হিসাবে কাজ করতে চাও এবং কিছু সাইটে কাজ করেছো বলে কনফিডেন্সের সাথে মিথ্যা বলে দাও কাজ না করলে অভিজ্ঞতা আসবে কোথা থেকে তাইনা? আর প্রুফ চেকিং ছাড়া কোন লেখা বই আকারে প্রকাশ হয় না সেখানেও আমরা অনেক বানান ভুল দেখতে পাই তারা যদি ঠিক মত কাজ করে তাহলে ভুল এলো কিভাবে? আশা করি আমার পয়েন্ট বুঝতে পেরেছো কয়েকটা ফ্রিতেই করে দাও সেজন্য বড় প্রকাশনীতে চলে যাও তোমারও লেখা পড়া হয়ে গেলো সেই সাথে কাজটাও করে দিলে এরপর অন্য প্রকাশনীতে গিয়ে সিভি দেখাও যে, অমুক বড় বড় প্রকাশনিতে কাজ করেছো তোমাকে লুফে নিবে তারা এরপর আর পেছনে দেখতে হবে না বাসায় পাণ্ডুলিপির স্তুপ হয়ে যেতে পারে তারা বইয়ের ফর্মা হিসাবে টাকা দেয় একেকটা বই থেকে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় করা যায় এবং অন্তত ৫০০ টাকা

এবার চলো আরেকটু অ্যাডভান্স কাজে যাওয়া যাক তুমি যদি ইংরেজি পড়তে পারো ও বলতে পারো তাহলে গোটা দুনিয়া তোমার জন্য উন্মুক্ত বিভিন্ন দেশি বিদেশী অফিস, ব্যক্তির ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট হতে পারো ইংরেজিতে অডিও বুক বানাতে পারো মোহাম্মদপুর, গুলশানের বিভিন্ন ইউএস কানাডিয়ান কল সেন্টারে ভয়েজ এজেন্ট হতে পারো এদের খুব দাম মাসে ১২ হাজার থেকে স্যালারি শুরু হয় এবং ৪-৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাও রাতে ঘুমের সমস্যার কারণে অনেকেই এই লাইন এরিয়ে চলে তবে পরিবারে নাইট গার্ড হিসাবে উপাধি পাওয়া আমি প্রায় পাঁচ মাস কাজ করে অনেক টাকা আয় করেছিলাম কারণ মুল কাজের পাশাপাশি উপরি দিয়ে থাকে

Image: Google


ইংরেজি জানা থাকলে ওয়েবসাইট বানিয়ে তাতে আর্টিকেল লিখে আয়ের নিশ্চিত রাস্তা খুলে নিতে পারো বছর খানেক কষ্ট করলে এরপর তুমি সাইটকে ভুলে গেলেও দেখতে পাবে প্রতি মাসে এই সাইট তোমার জন্য কয়েকশত ডলার নিয়ে আসছে আর যদি বন্ধুরা গ্রুপ করে কাজ করতে পারো তাহলে চাকরির জন্য সিভি নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে হবে না দেশে এমন ব্লগার কয়েকশত রয়েছে যারা মাসে ইংরেজি ব্লগ থেকে অন্তত ২ থেকে ৫ হাজার ডলার ইনকাম করছে এরসাথে রয়েছে অ্যাফিলিয়েট ইনকাম একটু বুদ্ধি থাকলেই এই জামানায় পকেট খালি থাকে না  

আর তুমি যদি টিউশনি করতে চাও সেটাও করতে পারো ফেসবুকে অনেক সাইট রয়েছে যারা প্রথমমাসের ইনকাম ভাগাভাগি করার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গায় টিউশনি দিয়ে থাকে এছাড়াও বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেও তুমি কাজ পেয়ে যাবে তুমি চাইলে ঘরে বসেই পড়াতে পারো সেজন্য অনলাইনে জুম বা গুগল মিট এ কোচিং করাতে পারো এক্সামের খাতার মার্কিং করে আয় করতে পারো কলেজ ভার্সিটিতে ফ্যাকালটি থেকে রিসার্চ বা ডাটা কালেকশনের কাজ করে, এসাইনমেন্ট করে লিখে, রিসার্চ পেপার নোট করে আয় করতে পারো তুমি ঘরে বসে থাকলে কাজ পাবে না সেজন্য অনলাইনে পোস্ট করো এমন অনেকেই বসে রয়েছে এসাইনমেন্ট লিখে দেয়ার লোকের জন্য তুমি কাজের অর্ডার নিয়ে আরও অনেকের সাথে মিলেমিশে কাজ করে প্রচুর আয় করতে পারো

Image: Google


তোমার হাতে যদি ৬ থেকে ১২ মাস বা আরও বেশি সময় থাকে তাহলে সময়টা নষ্ট না করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে কাজ করতে পারো তুমি ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব বা অ্যাপ তৈরি, এনিমেশন, ইত্যাদি শিখে কোন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ছাড়াই ইতিপূর্বে যেসব কাজ অনুশীলন করেছো সেগুলি দেখিয়ে বেশ ভালো কাজের অর্ডার পেয়ে যাবে অনেকেই মনে করে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ছাড়া কাজ পাওয়া যায় না বরং স্মার্ট ফ্রিল্যান্সাররা আজকাল মার্কেটপ্লেসের বাইরে থেকেই ক্লায়েন্ট পেয়ে থাকে এবং কাজ করে কারণ এতে করে মার্কেটপ্লেসকে ২০-৩০ শতাংশ কমিশন দিতে হয় না

বিজনেস করে ইনকাম অনেকেই ভাবতে পারো, আরে স্টুডেন্ট হিসাবে তোমার কাছে কয়টা টাকাই বা রয়েছে যে বিজনেস করবে ? মনে রেখো সুদীর্ঘ সময় ধরে আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বিজনেস করতে লাখ লাখ টাকা লাগে বা অন্তত ৪০-৫০ হাজার টাকা লাগে এবং চাকরি মানেই সরকারি চাকরি বা বিসিএস কখনো কি ভেবে দেখেছো, দেশের এত এত মানুষের ভেতর কতজন বিসিএস ক্যাডার ? কতজন সরকারি চাকরি করে? কতজন লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিজনেস করছে ? তুমি যেহেতু ছাত্রাবস্থায় আয়ের চিন্তা করছো এবং এই ভিডিও মন দিয়ে দেখছো তার মানে তুমি বুদ্ধিমান এবং সচেতন

বিজনেস করার জন্য তোমার প্রথমেই দরকার ইচ্ছাশক্তি এবং অপেক্ষা করার মানসিকতা ফেসবুকে একটা পেইজ করে পাইকারি মুল্যে কয়েক হাজার টাকার পণ্য কিনে তুমি বিজনেস শুরু করে দিতে পারো সেজন্য বিভিন্ন বিজনেস পেইজে পোস্ট দিতে থাকো নিজের পন্যের এবং লাইভ করো লাইভে প্রচুর সেল অর্ডার আসে যা পোস্ট করে পাওয়া যায় না কয়েকমাসের ভেতর দেখতে পাবে তোমার মুলধন বৃদ্ধি পেয়েছে এরপর তোমাকে আর পেছনে তাকাতে হবে না আর সবচেয়ে লাভজনক বিজনেস হল, ইলেকত্রোনিক্স এর বিজনেস কয়েক হাজার টাকা দিয়েই তুমি শুরু করতে পারো তুমি যদি থোরাই কেয়ার মানসিকতার ছেলে বা মেয়ে হয়ে থাকো তাহলে স্কুল-কলেজ, শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে একটু স্মার্টলি কথা বললেই যে কারো মাথা ঘুরে যাবে এবং তোমার পণ্য বিক্রি হতে থাকবে

Image: Google


মাস দুয়েক আগে তোমাদের সাথে একজনের গল্প শেয়ার করেছিলাম যে মাসে ছাত্রাবস্থায় এই কাজ করেই মাসে ৩০ হাজার টাকা গড়ে আয় করছে এখন সে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে আর জবে না ঢুকে একটা দোকান নেয়ার পরিকল্পনা করছে এটা ভেবো না, সে পেরেছে বলে কি আমিও পারবো নাকি ? বরং এটা ভাবো, সে যদি ভাত খায়, তাহলে আমিও ভাত খাই এবং সে পারলে আমি তারচেয়ে ভালো পারবো এটাই তোমাকে রাস্তা দেখাবে যেহেতু আমি নিজেও এখন এই সেক্টরে কাজ শুরু করেছি যা দুইমাস আগে জানিয়েছিলাম তাই এটা ভালো মতোই জানি এই লাইনে কি পরিমান মুনাফা হয়ে থাকে

এখন কথা হচ্ছে কিভাবে কি করবে ? প্রথমেই মনে রেখো সুযোগ জীবনে একবারই আসে আর তুমি যদি সত্যিই কাজের সুযোগ খুঁজে থাকো তাহলে এই ভিডিও থেকেই তুমি অনেকগুলি কাজের সুযোগ পেয়ে গেছো এখন যেভাবেই তুমি টাকা কামাই করতে চাও না কেন, কেউ তোমাকে গিলিয়ে দিবে না তোমাকেই রাস্তায় বের হতে হবে মানুষের কাছে ধর্না দিতে হবে এবং তোমার পরিকল্পনার কথা বন্ধুদের অবশ্যই বলবে না নয়ত তারা তোমাকে পিছিয়ে  যাওয়ার কারণ হবে এই দুনিয়াতে যত কাজ হয় তার সবগুলিই পরিশ্রম করেই অর্জিত তুমি যদি আজকে আমাকে বলো ঈশান ভাইয়া আমার জন্য একটা কাজ দেখেন, তাহলে আমি বলবো ওকে কিন্তু তুমি যদি নিয়মিত খোঁজ নিতে থাকো, প্রায় আমাকে নক দাও তাহলে সুযোগ আসা মাত্র তোমাকে সেটা জানাবো এখানেও তুমি যেই কাজ পাবে তার পেছনে তুমি পরিশ্রম করছো বলেই সেটা পাচ্ছো এটা মনে রেখো  

স্টুডেন্ট লাইফে ইনকাম করার জন্য সুপার ডুপার ক্রিয়েটিভ হতে হবে এমন কথা নেই জাস্ট চোখ কান খোলা রাখো তাহলেই চলবে তোমার পাশেপাশে যারা কাজ করছে তাদের ফলো করো এবং তাদের মত করে কাজ করা শুরু করে দাও তাহলেই তোমার ইনকামের পথ খুলে যাবে

আশা করি, এখান থেকে তুমি কিছু শিখতে ও জানতে পেরেছো  পরবর্তী নতুন কোন লেখা পর্যন্ত, আল্লাহ হাফেজ । 


পুরো লেখাটা ভিডিও আকারে দেখতে চাইলেঃ 







কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.