অনলাইনে কি আসলেই ইনকাম করা যায় ? প্রকৃত সত্য জানতে হবে - ২০২২

আমার ফেসবুক পেজে এই প্রশ্নটা দেয়া রয়েছে যে, "অনলাইনে কি আসলেই ইনকাম করা যায় ?" - এই প্রশ্নটার অটো রিপ্লাই সেট করা রয়েছে । যদিও আমি ফেসবুকে সচারচর এই প্রশ্নকারীকে চেক করি না কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা হয় এই প্রশ্নের ব্যাপারে কারা কারা বেশ উৎসাহী ? প্রশ্নকারীদের ফেসবুক প্রোফাইলও দেখি টুকটাক । এর ভেতর ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক এমনকি বুয়েটের মত দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে । তার মানে কি দাঁড়ায়, এরা জানে না, অনলাইন থেকে আসলেই আয় করা যায় কি না ? 


Photo: Pixabay

আপনি বলতে পারেন, সবাইকে সবকিছু জানতে হবে এমন কোন কথা নেই । জি, আপনার সাথে আমি একমত । তবে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো সুযোগ পেতে যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়েই তারপর সুযোগ মেলে তাই না ? তাহলে এরা জানে না কেন যে, অনলাইন থেকে ইনকাম করা যায় কি না ? আমি ধরে নিচ্ছি, বইয়ের জ্ঞান থাকলেও এদের বাকি দুনিয়া সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাই এমন প্রশ্ন করে থাকে । 


এবার চলুন জানা যাক, অনলাইনে কি আসলেই ইনকাম করা যায় ? 

আপনার কাছে একটা প্রশ্ন, আপনি কি অযথা কোন কাজ করেন ? কোন দরকার ছাড়া কিছু ক্রয় করেন ? একদম দরকার নেই এমন কোথাও বিনিয়োগ করেন ? আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ কত ? কয়েক লাখ থেকে কয়েক কোটি টাকা হতে পারে ? কিন্তু গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল কিংবা বড় বড় টেক জায়ান্টরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে বিভিন্ন সার্ভিস তৈরি করে অনলাইনে কাজ করার জন্য । তাদের স্বার্থ কি শুধুই মানবসেবা নাকি ইনকাম করাও ? আপনি ফেসবুক ব্যবহার করছেন সামাজিকতা রক্ষা কিংবা যোগাযোগের জন্য কিন্তু ফেসবুক বা মেটা কি শুধু এই জন্য এত বড় প্লাটফর্ম বানিয়েছে ? যদিও তারা শুরুটা করেছিল সাধারন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে । তবে এখন তারা বিলিয়ন ডলার আয় করছে প্রতি বছরে । এটা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে ? 

আপনি যখন ফেসবুকের নিউজফিড কিংবা মেসেঞ্জারে স্ক্রল করতে গিয়ে বিজ্ঞাপন দেখতে পান, সেই বিজ্ঞাপন দেখানোর পরিবর্তে  বিজ্ঞাপনদাতা থেকে মোটা অংকের অর্থ পাচ্ছে । এই দুনিয়ায় যা কিছু আয় হয়, সবই বিজ্ঞাপন । বিজ্ঞাপন থেকেই তারা আয় করে । 

এবার ফেসবুক কিংবা টেক জায়ান্টদের কথা বাদ । আমাদের হাবুল ভাইয়ের একটা ডাটা এন্ট্রি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে সরকারি কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও থেকে বিভিন্ন মানুষের জীবনযাত্রার মান নিয়ে সার্ভে করা হয়, তার ফর্মের ডাটাগুলি সার্ভারে রেকর্ড করা হয় । যাকে ডাটা এন্ট্রি বলে । যেহেতু একেক ফরমে একেক রকম তথ্য থাকে তাই এই কাজটা রোবট দ্বারা করা সম্ভব হয় না । এখানে মানুষেরা কাজ করে । এরা হাবুল ভাইয়ের অফিসে বসে কিংবা তার ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করে এই ডাটাগুলি রেকর্ড করতে সাহায্য করে । সেটা কি ফ্রিতে হয় ? অবশ্যই নয় । সেজন্য তারা প্রতিটা কাজের পরিবর্তে টাকা পাচ্ছে । তাহলে অনলাইনে ইনকাম করা যায় সেটা বুঝতে পেরেছেন তো ? 

অনেক সাইট রয়েছে ইউজারদের কাজ করিয়ে টাকা দেয় না । তারা প্রতারণা করে । অনলাইনের ভাষায় তাদের "স্ক্যামার" বলা হয় । সাধারণ ইউজাররা রিয়াল বা ফেইক সাইট নামে চেনে । যেগুলি সঠিকভাবে ইউজারদের পেমেন্ট করে যাচ্ছে দিনের পর দিন তারা সুনাম অর্জন করে এবং "লেজিট" নামে পরিচিত । ফেক সাইটগুলি স্ক্যাম সাইট ও ভালো সাইটগুলি লেজিট সাইট নামে অভিহিত করা হয় । অনলাইনে যদি প্রথমবার এসে থাকেন তাহলে এই দুইটা শব্দ প্রচুর শুনতে পারবেন তবে অর্থ না বুঝলে মাথার উপর দিয়ে যাবে । 

মনে রাখবেন বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ । আপনি যদি কোন অফিসে স্বশরীরে গিয়ে কাজ করেন তাহলে সেখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ থাকে এবং মামা চাচার জোর দেখানোর অপশন রয়েছে । তবে আপনি যদি অনলাইনে কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে স্কিলড হতে হবে । প্রশিক্ষিত একজন সেনা হতে হবে । কারণ প্রতিদিনই অনলাইনে হাজার হাজার বেকার ছেলে মেয়েরা ঢুকে পড়ছে এবং ব্যাংয়ের ছাতার মত গজিয়ে উঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে মূল্যহীন কোর্স করিয়ে এদের লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে । এগুলি কি মিছেমিছি হচ্ছে মনে করছেন ? অনলাইনে আয় করা যায় তাই এগুলি ঘটছে । এরপরও যদি মনে করেন অনলাইনে আয় করা যায় না তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন কিংবা কুয়োতে বাস করছেন । 

একটা ব্যাঙ কুয়োকেই পুরো পৃথিবী মনে করে কিন্তু কুয়োর বাইরে রয়েছে বিশালতা ও বৈচিত্র্য । আপনি যদি সবকিছু কুয়োর ভেতর থেকে বিচার করেন তাহলে আপনার জ্ঞানের সীমা খুবই কম থাকবে । আপনাকে কুয়োর বাইরে এসে উপর থেকে দেখতে হবে । তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কুয়ো ও আপনার সীমা কত ছোট ছিল এবং আপনি বিশাল জ্ঞানের সমুদ্রে এসে পড়েছেন । জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে যেকোনো কিছুর বিচার করতে চাইলে নিজ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে তারপর যাচাই করবেন তাহলে ব্যর্থতা আসবে না । 

আপনি যদি প্রতিযোগিতার এই যুগে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে অবশ্যই খুব ভালোমত শিখে পড়ে আসতে হবে । আপনি সামান্য পিয়নের চাকরির প্রস্তুতি নিতে এক মাস ব্যয় করবেন অন্যদিকে অনলাইনে এসে অ্যাকাউন্ট করেই ইনকাম করতে চাইবেন সেটা তো হবে না । অনলাইনে টাকা নিয়ে কেউ বসে নেই । প্রবাদ আছে, ঢাকায় টাকা ওড়ে । আপনি কি একটা ফুটো নোটও উড়তে দেখেছেন ? দেখেন নাই । এটা কথার কথা বা প্রবাদ । কিন্তু এটাকে ভিন্নার্থে ব্যবহার করা হয়েছে । ব্যাপারটা হল, আপনি যদি ধরতে পারেন (যদি যোগ্যতা দেখাতে সক্ষম হন) তাহলে ইনকাম করতে পারবেন । একই ব্যাপার অনলাইনেও । আপনি যদি কাজ পারেন এবং ক্লায়েন্টের পছন্দমত কাজ করতে পারেন তাহলে ডিমান্ড অনুযায়ী ইনকাম করতে পারবেন । এখন চিন্তা করুন, আপনি অনলাইনে ইনকাম করা যায় শুনেই কতগুলি মার্কেটপ্লেস কিংবা ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করেছিলেন কিন্তু একটাকাও আয় করতে পারেন নাই । কারণ আপনি কাজ করার জন্য যোগ্য নয় । আপনি কি একজন যোগ্যতাহীনের কাছে আপনার জরুরী কাজ দিবেন করে দেয়ার জন্য ? অবশ্যই দিবেন না । এতে কাজ তো হবেই না বরং নষ্ট হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে । 

নিজেকে কখনোই একজন ভিক্টিমের দিক থেকে যাচাই করবেন না । ভিন্নদিকে যিনি বসে আছেন, সেখানে আপনি থাকলে কি করতেন সেটাও চিন্তা করবেন । তাহলে অনলাইন বা অফলাইনে কখনো ভুলের স্বীকার হবেন না । 

আশা করি, আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, অনলাইনে টাকা ওড়ে না বরং সেটা খাবলে ধরে নিতে হয় এবং অনলাইনে ইনকাম করা যায় । যারা বলে বেড়ায়, অনলাইনে ইনকাম করা যায় না, তারা ওইসব মানুষ যারা যোগ্যতাহীন এবং অনলাইনে এসেই কাজ না শিখেই কাজ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ব্যর্থ হয়ে অনলাইনের বদনাম করে বেড়ায় । এখন আপনার সিদ্ধান্ত, আপনি কোন দলে থাকবেন, অনলাইনে ইনকাম করবেন নাকি আজীবন বিশ্বাস করে যাবেন, " অনলাইনে ইনকাম করা যায় না, পুরোটাই মিথ্যা ও চাপাবাজি" । 


অনলাইনে আয় করা শিখতে চাইলে ক্লিক করুন 


লিখেছেনঃ ঈশান 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.